সেদিন কৃষ্ণপক্ষ ছিল। আকাশে ছিল না চাঁদ। কালো মেঘে ঢাকা ছিল আকাশ। বৃষ্টি হয়েছিল মধ্যরাতে। প্রকৃতি জানত জনকের রক্তস্রোতে ভাসবে বাংলাদেশ। তাই বৃষ্টি হয়ে ঝরেছিল প্রকৃতির অব্যক্ত কান্না। সেই মেঘ-বৃষ্টির অন্ধকার রাতে বেরিয়ে আসে ঘাতকের দল। ভোরের আলো ফোটার আগেই ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে রচনা করে ইতিহাসের কলঙ্কিত অধ্যায়। তারা সপরিবারে সংহার করেছিল বাঙালির স্বাধীন জাতিরাষ্ট্রের স ষ্টাকে। যিনি আঁধারে দিয়েছেন আলো, তাকেই হত্যা করে ওরা অমানিশার অন্ধকারে ঢেকে দিল গোটা দেশ। তার অপমৃত্যু জাতির করুণ ট্র্যাজেডি। আজ অশ্রুঝরা শোকাবহ ১৫ আগস্ট, সেই ট্র্যাজেডির আটত্রিশতম বার্ষিকী। দিনটি সারা দেশে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় পালন করা হচ্ছে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে। ১৯৭৫ সালের অভিশপ্ত এই দিনে জাতি হারিয়েছে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। কিছু বিশ্বাসঘাতক নেতার চক্রান্তে সেনাবাহিনীর একদল বিপথগামী সদস্য ধানমন্ডির বাসভবনে নৃশংসভাবে হত্যা করে তাকে। ঘাতকের নির্মম বুলেটে রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে আরও প্রাণ হারান তার সহধর্মিণী, তিন ছেলেসহ পরিবারের ১৮ জন সদস্য। জাতির হৃদয়ে লেখা নাম বঙ্গবন্ধু। এ ভূখণ্ডের মানুষের কাছে এক অভিন্ন দ্যোতনায় ভাস্বর হয়ে আছে এ নাম। স্বাধীন বাংলাদেশ তার অমর কীর্তি। নিজের কীর্তিতে সমুজ্জ্বল তিনি। তাই বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলাদেশ। বিংশশতকে বাঙালির সর্বোত্তম অর্জন বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতা। এই স্বাধীনতার জন্য তিনি বঞ্চিত পূর্ব পাকিস্তানিদের উদ্বুদ্ধ করেছিলেন বাঙালি জাতীয়তাবাদের চেতনায়। করেছিলেন মুক্তির মন্ত্রে উজ্জীবিত। দিয়েছিলেন স্বাধীনতার দীক্ষা। তারই নির্দেশিত পথে দুর্ভেদ্য ঐক্য আর দুর্জয় সংকল্পে '৭১-এ সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে রক্তের সাগর পেরিয়ে আসে প্রিয় মাতৃভূমির স্বাধীনতা। আনন্দ-বেদনার মিশেলে সৃষ্টি হয় বাঙালির নতুন ইতিহাস। গৌরবের বীরত্বগাথা। দামাল মুক্তিযোদ্ধা আর মুক্তিপাগল মানুষের যূথবদ্ধ লড়াইয়ের মুখে উধাও হয় পাকিস্তানি বর্গিরা। বিজয়ের বরমাল্য পরে বাঙালি জাতি। জনগণের এ বিজয়ের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু মুজিব। তিনি আমাদের রাজনৈতিক ও ভৌগোলিক মুক্তির সিপাহসালার। বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসের মহানায়ক, বিংশ শতকের শ্রেষ্ঠতম বাঙালি। 'তার জন্ম একটি জাতির উন্মেষ, নতুন দেশের অভ্যুদয়।/তার মৃত্যু অমোচনীয় কলঙ্ক, এক করুণ ট্র্যাজেডি।/বঙ্গোপসাগর শোভিত ব-দ্বীপ জুড়ে তার নাম/শেখ মুজিবুর রহমান।'
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস